আন্তঃনগর বাঁচান পর্ব-২

১ম পর্বটি না পড়ে আসলে পড়ে আসার অনুরোধ থাকবে।
আন্তঃনগর এর আসল মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু করণীয় রয়েছে রেলের।
চাইলেই বলা যায় এই স্টপেজ ওই স্টপেজ উঠিয়ে দাও।তাইলেই কেল্লাফতে।
কিন্তু এটা হবে মাথা ব্যথার চিকিৎসা না করে মাথাই কেটে ফেলা!
রেলকে কতিপয় কালোবিড়ালেরা এমন অবস্থায় এনে রেখেছে,এখান থেকে উঠে আসা সহজসাধ্য না।কাজেই কালকেই আন্তঃনগর তার যৌবন ফিরে পাবে আমি সেটা আশাও করি না।
বর্তমানে আন্তনগরেরই লোকো ক্রাইসিস চলছে,৩০০০ সিরিজের লোকোমোটিভ আসার পরেও রেল ধুকছে লোকো সাপ্লাই দিতে।
৩০০০ এর অর্ধেক ফ্লিট বসা।২৯** গুলো জিওএইচ এর নামে এমন অবস্থা করা হয়েছে যে লোকালও টানতে পারেনা!
২৬০০,২৭০০ এদেরকে মে*রেই ফেলা হইল রীতিমত।দাদুভাইরাও আজ কবরে।
সবচেয়ে অবাক লাগে এত এত কোচ উন্মুক্ত হলো সেগুলো কই?এত ভ্যাকুয়াম কোচ কোথায় হারায়ে গেল?
এসব সমস্যাকে আমলে নিয়ে এ মুহুর্তে রেল যা করতে পারে-
উন্নত পার্টস দিয়ে টেকসইভাবে লোকোগুলোর ওভারহলিং করা।বসে থাকা লোকোগুলো ট্র্যাকে ফিরানো।
অবিলম্বে রিসেন্ট সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া লোকালগুলো চালু করা।এক্ষেত্রে আন্তনগরের অবমুক্ত ভ্যাকুয়াম কোচগুলো দিয়েই চালানো হোক না! সিট ত একই।এত এত কোচ কোথায়?ইনকা আসার পর কতগুলো ভ্যাকুয়াম অবমুক্ত হলো সেগুলো কই?এই ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলা উচিত!
গত ৫ বছর আগেও রেলে লোকাল কমিউটারের বেশ ভালো একটা সার্ভিস ছিল।তখনো ত এত ট্রেন চলতো,তখন কিভাবে সামলাতো রেল?
বিগত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে যাওয়া লোকালের লিস্ট-
১)০৭/০৮ উত্তরবঙ্গ মেইল
২)৩৯/৪০ ঈশাখান এক্সপ্রেস
৩)কালিয়াকৈর কমিউটার(ডেমু)
৪)কুমিল্লা কমিউটার(ডেমু)
৫)জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ ডেমু
৬)পার্বতীপুর ডেমু
[ডেমু বর্তমানে সবগুলোই অকেজো।বিকল্প উপায়ে লোকাল কোচ দিয়েও অন্তত চালানো যেতে পারে]
৭)১৩/১৪ জালালাবাদ এক্সপ্রেস
৮)১৫/১৬ কুশিয়ারা এক্সপ্রেস
৯)২৪১/২৪২/২৪৩/২৪৪ ভৈরব/ময়মনসিংহ লোকাল
১০)৩১/৩২ উত্তরা মেইল
১১)২৫১/২৫২ দেওয়ানগঞ্জ লোকাল
১২)৭৫/৭৬ ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস
১৩)৯/১০ সুরমা মেইল ও ১১/১২ নোয়াখালী এক্সপ্রেস উভয়েই ২ রেকের পরিবর্তে এক রেক দিতে চলছে।কোন নির্ধারিত শিডিউল নেই,যেদিন মন চায় চালাচ্ছে।যাত্রীদের জন্য এই ট্রেন দূটি কার্যত বন্ধই!শুধু মালের জন্য চালানো হয়।
১৪)ঢাকা-জয়দেবপুরের মাঝে চলাচলকারী তুরাগ এক্সপ্রেসের বর্তমানে এক ট্রিপ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।পূর্বে ৩বার যাতায়াত করতো ট্রেনটি!

  • আরো থাকতে পারে।
    একবার ভাবুন এতগুলো ট্রেন বন্ধ।বন্ধ হলেই কি এদের যাত্রীরা হারিয়ে গিয়েছে!তাদের ত বিকল্প হিসেবে আন্তঃনগর ব্যতিত কিছুই নেই।
    বন্ধ হয়ে যাওয়া লোকালগুলো ফিরিয়ে আনলেও আন্তনগরের উপর থেকে বিশাল একটা চাপ কমে যায়।
    প্লিজ,লোকালেও মানুষই যাতায়াত করে।লোকালগুলোকে সময়মত চালানো হোক।মানুষ লোকাল থেকে আন্তঃনগরমুখী হওয়ার একটা বড় কারণ হলো রেল লোকালকে দামই দেয় না।ঘন্টার পর ঘন্টা ফালায়ে রাখা হয় লোকালগুলো।যাত্রীরা কখন গন্তব্যে পৌছাবে এর নিশ্চয়তাই যদি না থাকে তাহলে কিভাবেই বা তারা লোকালে উঠতে উৎসাহ পাবে আন্তঃনগর রেখে?
    ঢাকাগামী কর্ণফুলী কমিউটার কে একেকদিন একেক স্টেশনে বসিয়ে ৫-৬টি পিআরসি খাওয়ানো হয়।যাত্রীদের কোন এনাউন্সমেন্ট ও দেওয়া হয়না।তো নরসিংদী,ভৈরবের যাত্রীরা কেনই বা এটায় উঠবে?তারা আন্তঃনগরমুখী হতে বাধ্য!
    রেলের এক্ষেত্রে অনেক দায়সাড়া ভূমিকা পালন করে,মানে ট্রেন গেলেই হইল কখন যাবে তা নিয়া চিন্তা নাই!
    এরূপ মনোভাব লোকাল/কমিউটার কে গলাটিপে হ ত্যা করার সমান।
    স্বৈরাচার আমলে রাজনৈতিকভাবে বেশ কয়েকটা স্টপেজ দেওয়া হয়েছে,এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-কুমিরা,গুণবতী,বরমাচল…।ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রদত্ত এসব স্টপেজে মাসে ১০০০ মানুষও উঠে কি না সন্দেহ!রাজস্বের হিসাব দেখে এসকল স্টপেজ চিহ্নিত করে বাতিল করা হোক!

পাশাপাশি সকল লোকাল/কমিউটার ফিরিয়ে এনে যতগুলো স্টেশনে পর্যাপ্ত ট্রেনের ব্যবস্থা হয় সেগুলো থেকে আন্তঃনগর যাত্রাবিরতি উঠিয়ে নেওয়া হোক।

আসলে দূরবর্তী যাত্রার আন্তঃনগর এর মর্যাদা ফিরাতে নিকটবর্তী যাত্রীদের লোকাল ও কমিউটার সার্ভিসের ব্যবস্থা করার বিকল্প হয়না!যত কিছুই হোক,রেলই এমন অবস্থা করেছে যে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদেরও আন্তঃনগরের বিকল্প নাই!এই অবস্থা থেকে ফেরত আসার অন্য কোন বিকল্প নাই।
তবে,একটা সমাধান কিছু কিছু ট্রেনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়।
সেম রুটের একাধিক ট্রেন থাকলে এদের মাঝে স্টপেজ সমন্বয় করা হোক!এটা যদিও সকল ক্ষেত্রে সম্ভব না।তবুও কিছুটা সমাধান হয় ঠিকই।
একই স্টপেজে ২ গাড়ি দাড়ানোর চেয়ে ২ গাড়ি দুটো ভিন্ন স্টপেজে দাড়ালে উভয় স্টপেজেই কিন্তু যাত্রীরা ২স্টপেজের আসন এক স্টপেজেই পেতে পারে।
এক্ষেত্রে সময় একটা ব্যাপার হতে পারে।কাঙ্খিত সময়ে হয়ত চলা যাবেনা।
কিন্তু রেল ত সবাইকে সমান সুবিধা দিতে পারেনা।ট্রেন তো তার সময় মতোই চলতে হবে!
শর্ট-টার্মে এর চাইতে বেশি কিছু আসলে করা সম্ভব না।তবে দীর্ঘমেয়াদে সঠিক পরিকল্পনা বাংলাদেশের রেলসেবাকে ভিন্ন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে!
শেষ পর্বে লেখব লং টার্মে রেলের করণীয় কি কি হতে পারে তা নিয়ে কিছু প্রস্তাবনা।