আচ্ছা,আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস বলতে মূলত কি বোঝায়?
আন্তনগর হলো এমন রেল সার্ভিস যা অধিক দূরত্বের শহরগুলোকে কানেক্ট করবে।এটি না লোকাল যাত্রার মাধ্যম হবে,না নিকটবর্তী এলাকার মধ্যে ঘনঘন স্টপেজ দিবে।
আন্তনগর এর মূল উদ্দেশ্য স্বল্প বিরতি তে অধিক ডিস্টেন্স কভার করা।
আচ্ছা,আসেন আরেকটু ভেঙ্গে বিশ্লেষণ করি,
নগর বলতেই বা কি বুঝায়?
আরও সংকীর্ণ অর্থে নগর বা শহর বলতে কোনো স্থায়ী ও ঘনবসতিপূর্ণ মানব বসতিকে বোঝাতে পারে, যার এক নির্দিষ্ট প্রশাসনিক সীমানা রয়েছে এবং যার সদস্যরা মূলত কৃষিকাজ ব্যতীত অন্যান্য জীবিকায় ব্যস্ত।সাধারণত কোনো শহরে বাসস্থান, পরিবহন, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, ভূমির ব্যবহার, পণ্য উৎপাদন, যোগাযোগ, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে নিজস্ব নিয়মকানুন ও ব্যবস্থা থাকে।
উক্ত দুটি সংজ্ঞার মাঝে সমন্বয় করলে কি দাড়াচ্ছে?
আন্তঃনগর ঘনবসতিপূর্ণ,গুরুত্বপূর্ণ ও পরিপূর্ণ শহরগুলোতে দাঁড়াবে।কিন্তু স্বল্প দূরত্বের মাঝে অবস্থিত শহরে নয়,আবার উপ-শহর,গ্রাম,ইউনিয়ন পর্যায়েও নয়।
এবার আসি বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্ষেত্রে।
আমি জানিনা,বিআর কি ভিন্ন কোন সংজ্ঞায় বিশ্বাসী কি না।নয়তো একটি আন্তঃনগর ট্রেন ৫ কিমি পরপর গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়েও কিভাবে দাঁড়ায়?
অনেকে বলবেন আমি বোধহয় ইউরোপ-আমেরিকায় থাকি।বাংলাদেশে এসব নিয়ম খাটে না।
আশ্চর্য,এটা কি গর্বের বিষয়?নিয়মানুযায়ী চলাতে সার্থকতা নাকি নিয়ম ভাঙ্গায়?
বিআর এর আন্তঃনগর এর ৩টি শ্রেণী বিদ্যমান।
“ক” শ্রেণী (অধিক গুরুত্বপূর্ণ) : এই শ্রেণীর আন্তঃনগর ট্রেন অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বেশী দুরত্বের মধ্যে চলাচল করবে এবং বিরতিহীন বা যথাসম্ভব কম বিরতিযুক্ত হবে।
“খ” শ্রেণী (মাঝারী গুরুত্বপূর্ণ) : “ক” ও “গ” শ্রেণীভুক্ত নয়, এরূপ ট্রেনগুলো “খ” শ্রেণী হিসেবে অভিহিত হবে।এরা দীর্ঘ দূরত্বে মাঝারি সংখ্যক স্টপেজ দিবে।
“গ” শ্রেণী (কম গুরুত্বপূর্ণ) : এই শ্রেণীর আন্তঃনগর ট্রেন কম গুরুত্বপূর্ণ ও কম দুরত্বের দুটি স্থানের মধ্যে চলাচল করবে।
দুঃখজনক হলেও রেল নিজের দেওয়া সংজ্ঞানুসারেও চলতে পারেনি! কিছু উদাহরণ(শুধু ইস্ট জোন)-
“গুণবতী” কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একটি ইউনিয়ন।এখানে স্টপেজ দেয় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী অন্যতম আন্তঃনগর ৭০৩/৭০৪ মহানগর প্রভাতী/গোধুলী[ক শ্রেণী]
“কুমিরা” চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন।এখানে স্টপেজ দেয় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ৭২১/৭২২ মহানগর এক্সপ্রেস [খ শ্রেণী]
একই ট্রেন স্টপেজ দেয় ভৈরব মেঘনা সেতুর এপার-ওপার ভৈরব বাজার জংশন-আশুগঞ্জ।দূরত্ব ৩ কিলোর মত।সেতু পারাপার সার্ভিসে আরো রয়েছে নোয়াখালীর একমাত্র আন্তঃনগর ৭১২ ডাউন উপকূল এক্সপ্রেস [ক]
“বরমচাল” মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন।এখানে স্টপেজ দেয় সিলেট অভিমুখী জয়েন্তিকা(৭১৭)/উপবন(৭৩৯/৭৪০)/উদয়ন(৭২৪)/পাহাড়িকা(৭১৯)।বলা হয়ে থাকে রাতের বেলা এই স্টেশনে কুকুর ও থাকেনা ট্রেনে উঠার জন্য।
সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হলো বরমাচল ইউনিয়নে আপ-ডাউনে স্টপেজ দেওয়া উপবন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মত স্টেশনে দাঁড়ায় না।
খোদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি না দেওয়া ৭৭৩/৭৭৪ কালনী এক্সপ্রেস(ক) যাত্রাবিরতি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নে।
জামালপুর জেলার কেন্দুয়া বাজার ও জাফরশাহী [D Class] স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয় যথাক্রমে অগ্নিবীণা(গ) ও জামালপুর এক্সপ্রেস(ক{!})।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই হওয়া সত্বেও শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয় ৭৪৫/৭৪৬ যমুনা এক্সপ্রেস(গ)
মাত্র ৩ কিমি ব্যবধানে থাকা সরারচর-বাজিতপুর উভয় স্টেশনেই যাত্রাবিরতি করে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের সকল ট্রেন!
মেইল থেকে আন্তঃনগর এ উন্নীত হওয়া ৮০১/৮০২ চট্টলার(গ) এখনো সেই মেইলের স্টপেজই বহাল তবিয়তে আছে।
০১ আপ ঢাকা মেইল ও ৮০১ আপ চট্টলা উভয়েরই ১৪টি করে স্টপেজ,অথচ চট্টলা বর্তমানে চাইনিজ নিয়ে চলা আন্তঃনগর!আর ঢাকা মেইল সেই ভ্যাকুয়াম নিয়েই দাপট দেখিয়ে ছুটছে।
বুঝলামনা,০১ আপের সাথে বৈষম্য হচ্ছে নাকি চট্টলার সাথে উপহাস?
পোস্ট অতিরিক্ত লম্বা হবে বিধায় ওয়েস্ট জোন অনুল্লিখিত।
এখন,
গত ৪ বছরে যেসব এলাকায় আন্তনগরের স্টপেজের জন্য দাবী করা হয়েছে ও দেওয়া হয়েছে-
সরারচর আঠারোবাড়ি (বিজয়)
নুরুন্দি(অগ্নিবীণা)
আউলিয়ানগর(ব্রহ্মপুত্র গতবছর দাবী করা হয়)
পিয়ারপুর(ব্রহ্মপুত্র,যমুনা)
কুমিরা(মহানগর এক্সপ্রেস)
গুণবতী(মহানগর প্রভাতী/গোধুলী)
শ্রীপুর(যমুনা)
কেন্দুয়া(অগ্নিবীণা)
জাফরশাহী (জামালপুর,যমুনা)
হাসানপুর (মেঘনা)
বরমাচল(উপবন,উদয়ন,পাহাড়িকা)
নলডাঙ্গা,তালোড়া(রংপুর)
মির্জাপুর(সিল্কসিটি)
দর্শনা,চুয়াডাঙ্গা(বেনাপোল)
[আরো থাকতে পারে]
আপা যাওয়ার পর এই কয়দিনেই আন্দোলন হলো নলডাঙ্গা,বামনডাঙ্গা,মহিমাগঞ্জ, শ্রীপুর।
এর মাঝে সবগুলোই অযৌক্তিক তা না।আবার যৌক্তিক স্টপেজও হাতেগোনা কয়েকটি।বেশীরভাগ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আদায়কৃত।
থামুন,আমি জানি যেসব এলাকার নাম নিয়েছি তারা পারলে আমাকে গুম করার জন্য রেডি হচ্ছেন!
সবাই একটা প্রশ্ন অবশ্যই করবে,
এসব এলাকার মানুষের কি তাহলে ট্রেনে চড়ার অধিকার নেই?
উত্তর হলো,
আছে।
পরবর্তী পর্বে আমি সমাধান নিয়েও নিজের অভিমত দিব।এই পর্বের মূল উদ্দেশ্য ছিল আন্তঃনগরের সংজ্ঞা ও বাস্তবের আকাশ-পাতাল পার্থক্যটা স্পষ্ট করে দেখানো।
আমার মূল আর্গুমেন্ট ২ জায়গায়-
আন্তনগর কোন গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে স্টপেজ দিতে পারেনা।প্রধান শহরগুলোতেই দিবে।
আন্তঃনগর স্বল্প দূরত্বে ঘনঘন স্টপেজ দিতে পারে না।
আমি সব উদাহরন আনতেও পারিনি,কারণ বিআর এর গুটিকয়েক আন্তঃনগর ই তার নাম রক্ষা করতে চলতে পেরেছে।আমরা যদি সচেতন না হই,তবে রেলসেবা আমাদেরই নষ্ট হবে পাশের দেশের নয়!
আমরাই গালি দেই আন্তলোকাল,আবার আমরাই আন্তঃনগর এর স্টপেজ চাইতে অবৈধভাবে ট্রেন আটকাই!
আরো সমস্যা নজরে আসলে জানান।আলাপ করুন।আলাপ তুলুন।
তবেই পরিবর্তন আসতে পারে!
আরেকটি অনুরোধ,আমাকে গাইল্লাইতে চাইলে অন্তত সমাধানের পর্ব দেখে তবেই অপছন্দ হলে গালি দিবেন।